ডুমুরের বৈজ্ঞানিক নাম Ficus। এটি হল Moraceae পরিবারের 850 টিরও বেশি প্রজাতির কাঠের গাছ। এই প্রজাতির গাছ, গুল্ম, লতাগুল্ম ইত্যাদি সমষ্টিগতভাবে ডুমুর গাছ বা ডুমুর নামে পরিচিত।
ডুমুর নরম ও মিষ্টি ফল। ফলের আবরণের অংশ খুব পাতলা এবং ভিতরে অনেক ছোট বীজ থাকে। এর ফল শুকনো ও পাকিয়ে খাওয়া যায়। এই প্রজাতি উষ্ণ জলবায়ুতে বৃদ্ধি পায়। কখনও কখনও এটি চাটনি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, ডুমুর স্ন্যাক খাবারে ব্যবহার করা হয়।
পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালা যেসব বেহেশতি ফল দান করেছেন তার মধ্যে ডুমুর অন্যতম। ডুমুরের গুরুত্ব বিবেচনা করে আল্লাহ ডুমুরের নামে একটি সুরার নামকরণ করেন সুরা ত্বিন। সুরা ত্বিনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন— ‘ভাবো ডুমুর ও জয়তুনের কথা এবং সিনাই পর্বতের কথা এবং এ নিরাপদ শহরের (মক্কা) কথা আর আমরা মানুষকে বানিয়েছি সর্বোত্তম শারীরিক গঠনে। ’ সুরা আত ত্বিন।
ডুমুরের জৈব রাসায়নিক উপাদান
ডুমুরে প্রচুর শর্করা ও বিভিন্ন বিজারক চিনি যেমন ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ পাওয়া যায়। এতে ৫০% পর্যন্ত মনোস্যাকারাইড ও অলিগো-স্যাকারাইড থাকে। এতে কিছু ফিউরানো কোমারিন যেমন সোরালিন ও বারগাপটিন পাওয়া যায়। ডুমুরে সাইট্রিক এসিড, ম্যালিক এসিডসহ কিছু জৈব এসিড থাকে।
ডুমুরের পুষ্টি উপাদান
ডুমুর অত্যন্ত উচ্চ ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, ছাল, মূল ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় অনাদিকাল থেকে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরের পুষ্টিগুণ রয়েছে ৩৭ কিলোক্যালরি, ১২৬ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন, সাথে ভিটামিন এ, বি, সি এবং অন্যান্য উপাদান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জগডুমুর গুটি বসন্ত, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি ও প্রস্রাবের সমস্যা, স্নায়বিক দুর্বলতা, মস্তিষ্ক শক্তিশালীকরণ, সর্দি-কাশি, ফোড়া বা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া (টিউমার) এবং স্ত্রীরোগজনিত রোগের চিকিৎসায় কার্যকর।
প্রতি ১০০ গ্রাম পুষ্টি উপাদান হল ৮৮.১ গ্রাম জল, 0.৬ গ্রাম খনিজ, ২.২ গ্রাম হজমযোগ্য ফাইবার, ৩৭ গ্রাম শক্তি, ১.৩ গ্রাম চর্বি, 0.২ গ্রাম চর্বি, ৭.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৮০ মিলিগ্রাম ক্যালরি। লৌহ ১.১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৬২মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ শূন্য দশমিক শূন্য ৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ শূন্য দশমিক শূন্য 5 মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম।
বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে ডুমুরের গুরুত্ব
হিন্দুদের ক্ষেত্রে অশ্বত্থ(ডুমুর জাতীয়) একটি ধর্মীয় গাছ। ধর্মগ্রন্থ কোরআনে `ত্বীন` বা আঞ্জির নামে একটি অনুচ্ছেদ বা সূরা রয়েছে। সেখানে এই ফলকে আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত বা অনুগ্রহ রূপে ব্যক্ত করা হয়েছে। বাইবেলে এই ফলের উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, ক্ষুধার্ত যীশু একটি ডুমুর আঞ্জির গাছ দেখলেন কিন্তু সেখানে কোনো ফল ছিল না, তাই তিনি গাছকে অভিশাপ দিলেন। বৌদ্ধ ধর্মেও এই গাছ পবিত্র হিসেবে গণ্য। গৌতম বুদ্ধ যে বোধিবৃক্ষ তলে মোক্ষ লাভ করেন তা ছিল অশ্বত্থ গাছ, যা একটি ডুমুর জাতীয় গাছ
ডুমুরের প্রকারভেদ
ডুমুরের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত পাওয়া ডুমুর (Ficus hispida) ছোট এবং খাওয়ার অযোগ্য। এর অপর নাম 'কাকডুমুর'। যত্ন ছাড়াই এখানে-ওখানে প্রচুর পরিমাণে এই গাছ জন্মে। গাছ তুলনামূলকভাবে ছোট। এটি এশিয়ার অনেক অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। পাখিরাই প্রধানত এই ডুমুর খেয়ে থাকে এবং পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে বীজের বিস্তার হয়ে থাকে। অনেক এলাকায় এই ডুমুরগুলো রান্না করে তরকারিতে খাওয়া হয়। এই ডুমুরের পাতা শিরিষ কাগজের মতো খসখসে। এর ফল কান্ডে থোকায় থোকায় জন্মে।
মধ্যপ্রাচ্যে যে ডুমুর (আঞ্জির) পাওয়া যায় (Ficus carica) তার ফল আকারে বড় হয় এবং এটি জনপ্রিয় ফল হিসেবে খাওয়া হয়। আফগানিস্তান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়। এর আরবি নাম 'ত্বীন', হিন্দি, উর্দু, ফার্সি ও মারাঠি ভাষায় একে 'আঞ্জির' বলা হয়। এই গাছ ছয় মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর আদি বাসস্থান মধ্যপ্রাচ্য।
জগডুমুর বা যজ্ঞডুমুর নামে আরেকটি প্রজাতির ডুমুর আছে, যার বৈজ্ঞানিক নাম Ficus racemosa। মূলত এই ধরনের ডুমুর তরকারিতে খাওয়া হয়।
এছাড়া অশ্বত্থ বা পিপল নামে আরেকটি ডুমুরের মতো গাছ আছে, যার বৈজ্ঞানিক নাম Ficus religiosa। এটি একটি বটগোত্রীয় বৃক্ষ এবং এর পাতার অগ্রভাগ বেশ সূচাল।
উপরের প্রজাতি ছাড়াও ডুমুরের আরও অনেক প্রজাতি রয়েছে।
ডুমুরের উপকারিতা
ডুমুরের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। চলুন জেনে নিই ডুমুরের কিছু উপকারিতা:
1. রক্তচাপ এবং বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণে ডুমুর
ডুমুর পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে সোডিয়াম-এর প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তারা পর্যাপ্ত লোহা, ইস্ট্রোজেন ইত্যাদি সরবরাহ করে বয়সের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। এটি আপনার হরমোনগুলিকে পরীক্ষার মধ্যে রাখে এবং আপনার শক্তিকেও বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। ডুমুর ত্বক এবং চুল এবং নখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। ডুমুরের পেস্ট মুখের ওপর মাখলে তা ব্রণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
2. ডুমুর ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
পর্যাপ্ত ও নিয়মিত পরিমাণ ডুমুর ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ডুমুর ফাইবারে সমৃদ্ধ অতএব ভাজা খাবার থেকে দূরে থাকার এটি ভালো উপায়। হালকা টিফিনের জন্য আপনি ডুমুর কে বেছে নিতে পারেন। এটি একই সাথে আপনার পেটও ভরাবে এবং আপনার শরীরকে যথেষ্ট পুষ্টিগুণও প্রদান করবে।
3. ডুমুর হৃৎপিন্ডের জন্য উপযুক্ত পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্য
ডুমুর রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ হ্রাস করে। ট্রাইগ্লিসারাইড হৃদরোগের জন্য দায়ী কারণ তারা রক্তনালীর মধ্যে জমাট সৃষ্টি করে যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের সৃষ্টি হয়।
4. ডুমুর ক্যানসারের সম্ভাবনা হ্রাস করে
ডুমুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় র্যাডিকেল এবং ক্রনিক প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। র্যাডিকেল ক্যান্সার, হৃদরোগ, এবং ডায়াবেটিস সহ দীর্ঘস্থায়ী রোগের জন্য দায়ী। ডুমুরকে এই দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য অবস্থার একটি প্রতিরোধক হিসাবে গণ্য করা হয়।
5. ডুমুর রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
ডুমুরগুলিতে উপস্থিত ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ডায়াবেটিক রক্তের শর্করার মাত্রা হ্রাসে সহায়তা করে। এছাড়াও ডুমুর মধ্যে প্রচুর পটাসিয়াম পাওয়া যায় যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
6. ডুমুর হাড়ের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে
স্বাস্থ্যকর ও মজবুত হাড়ের জন্য প্রয়োজন হয়। ক্যালসিয়াম, এবং ডুমুর হলো এই ক্যালসিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উৎস। দুগ্ধজাত পণ্যগুলি ক্যালসিয়ামের উৎস হলেও, তা যথেষ্ট হয় না, এবং এবং ডুমুর একটি সেরা পরিপূরক হিসেবে গণ্য হতে পারে।
7. ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে
ডুমুর ফাইবার সমৃদ্ধ এবং অন্ত্রের গতিশীলতার জন্য ভাল এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পারে। ফাইবার মলত্যাগে সাহায্য করে।
8. প্রজনন ব্যবস্থাকে সচল রাখে ডুমুর
ডুমুর ম্যাগনেসিয়াম, দস্তা এবং ম্যাঙ্গানিজের মত খনিজগুলির সমৃদ্ধ হয় যা প্রাণবন্ততা ও উর্বরতা বজায় অবদান রাখে। ডুমুর দুধে ভিজিয়ে অথবা ওপরে বর্ণিত যে কোন উপায়ে খাওয়া যায়। সুতরাং, আপনি যদি গর্ভবতী হন বা একটি শিশুর পরিকল্পনা করেন, তবে আপনার ডায়েটে এই ফলটি অতিঅবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন।
9. ডুমুর কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে
পানিতে কিছু ডুমুর সিদ্ধ করে কয়েকদিন পান করুন। এই পানি কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করে। আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চান তবে আপনি একজন ডায়েটিশিয়ান বা নিউট্রিশনিস্টের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
10. ভস্মকাগ্নি
একে লোকজ কথায় বলে খাই-খাই করা রোগ। এ রোগের উৎপত্তি বায়ুধিকার প্রধান অগ্নিমান্দ্যে এবং এর চিকিৎসা না করলে কৃশতা রোগ অনিবার্য। এ রোগ হলে কাকডুমুরের ফলের রস দিনে একবার বা দুবার এক চা চামচ করে খেলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ফলাফল পাবেন।
11. অপুষ্টিজনিত কৃশতা
এ ক্ষেত্রে পাকা কাকডুমুর কেটে পোকা আছে কি না দেখে নিয়ে তারপর রোদে শুকাতে হবে। তারপর প্রতি ৫ গ্রামের জন্য আধা কাপ দুধ এবং ২ কাপ জল ফুটিয়ে প্রায় আধা কাপে নামিয়ে সেই জল ডুমুরসহ পান করুন।
12. শোথে অপুষ্টি
শোথে অপুষ্টিজনিত রোগের ক্ষেত্রে কাকডুমুরের পাকা ফলের রস ২ চা-চামচ মাত্রায় একটু গরম করে প্রতিদিন একবার অথবা দুইবার খেতে হবে। এতে বুকের দুর্বলতাও কমবে, শোথও সারবে।
13. রক্তপিত্ত বা মুখ দিয়ে রক্ত ওঠা
ছোট হলে ৩টি পাকা কাকডুমুর , বড় হলে ২টি জলে মিশিয়ে নিয়ে একটি পাতলা ন্যাকড়া দিয়ে ছেঁকে নিন। সেই পানি দিনে ২-৩ বার পান করলে ২-৩ দিনের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে, গলায় সুড়সুড়ি ও কাশি হবে না।
14. শ্বেত প্রদর রোগে ডুমুর
15. পেটের সমস্যা
বারো মাস ধরে পেটের সমস্যা চলতে থাকলে কাকডুমুর গাছের গোড়ার দিকে শুকনো ১০ গ্রাম ছাল নিয়ে একটু থেঁতলে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করার পর এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সে পানি সকাল ও বিকেলে ২ ভাগ করে খেতে দিতে হবে।
15. শ্বেতী রোগ
শ্বেতী রোগের বেলায় পেটের দোষের নিয়মে খেলে ধীরে ধীরে দাগগুলোর রঙ স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। ডুমুরের তরকারিও খেতে হবে। চিকিৎসা শুরু হলে দাগের জায়গায় প্রদাহ বা জ্বালা শুরু হলে কয় দিন খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
16. ত্বকের বিবর্ণতা
যদি কোনো কারণে ত্বকের রং পরিবর্তন হয়, অর্থাৎ ভিন্ন হয়ে যায়, তাহলে ডুমুরের সেদ্ধ পানিতে (কাঁচা ডুমুর বা ছাল) ১০-১৫ বার ত্বক ধুতে হবে। এ ছাল বা ফল থেঁতলে নিয়ে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ ভাগ থাকতে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ব্যবহার করতে হবে। ১৫-২০ দিন ধরে এভাবে ব্যবহার করলে রঙ স্বাভাকি হবে।
17. দূষিত ক্ষত
নতুন হোক বা পুরাতন পচা বা সংক্রমিত ঘা ২০ গ্রাম কাকডুমুরের ছাল সিদ্ধ পানিতে ধুলে সংক্রমণ সেরে যাবে। এতে ৫-৬ কাপ পানিতে ছাল নিয়ে সিদ্ধ করে এক-দেড় কাপ থাকতে নামিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
18. ঋতুস্রাব
মহিলাদের অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হলে কচি ডুমুরের রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এটি দুধ এবং চিনির সাথেও মেশানো যেতে পারে।
19. আমাশয় নিরাময়ে ডুমুর
আমাশয় রোগে কাকডুমুরের পাতার একটি কুঁড়ি আতপ চালের সাথে চিবিয়ে খেলে রোগের উপশম হয়। এভাবে তিন দিন খেতে হবে। তা ছাড়া গাছের ছাল থেঁতলে নিয়ে মিছরির সরবতের সাথে ভালোভাবে চটকে ছেঁকে নেয়ার পর দিনে ২ বেলা ২ চা-চামচ করে।
20. মাথা ঘোরা
যদি কারো প্রচন্ড মাথা ঘরে তবে ভাতপাতে প্রথমে ১ চা-চামচ দূর্বাঘাস ভাজা খেয়ে পরে বীজ বাদ দিয়ে ডুমুর ভাজা খেলে উপকার হয়।
21. ডায়াবেটিস নিরাময়ে ডুমুর
কাকডুমুর গাছের শিকড়ের রস ডায়াবেটিস নিরাময়ে খুবই উপকারি। তবে সম্পূর্ণরূপে নিরাময়ের জন্য দীর্ঘদিন সেবন করতে হবে।
22. হেঁচকি রোগে ডুমুর
ডুমুর কেটে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে আধা ঘণ্টা পর ১ চা চামচ করে ৪-৫ বার পান করলে হেঁচকি বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ছাড়া শসায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকায় এটি খেলে স্কার্ভি, উচ্চরক্তচাপ, রক্তপাত, অর্শ, প্রস্রাবে রক্ত ও রক্তশূন্যতা নিরাময় হয়, তবে বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
23. যজ্ঞডুমুর
এটি উদুম্বর নামেও পরিচিত। যজ্ঞডুমুর কৃমিনাশক, সাইনাস সারায়, শোথ, রক্তদোষনাশক, ক্ষতনাশক, কুষ্ঠে কাজ দেয়। এর ক্ষীর গাঁটের ফুলোয় লাগিয়ে দিলে প্রদাহ বা জ্বালা ব্যথা কমে। নিচে যজ্ঞডুমুরের ব্যবহারবিধি দেয়া হলো।
24. কেটে রক্তপাত হতে থাকা
এ অবস্থায় যজ্ঞডুমুরের ঘনসার লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে, ব্যথা হবে না এবং ওটাতে ঘা সেরে যাবে। (ঘনসার বানানোর নিয়ম : ১২-১৫ সে.মি. ডালের সাথে কাঁচা পাতা ছেঁকে নিয়ে সেদ্ধ করার পর পানি ছেঁকে নিয়ে আবার ফুটিয়ে চিটাগুড়ের থেকে একটু ঘন করে বা সিদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে হবে।এতে অল্প সোহাগার ঘৈ মেশালে এটা আর নষ্ট হয় না।
25. বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের কামড় ও কুকুরে আঁচড়
এ অবস্থায় যজ্ঞডুমুরের ঘনসার লাগালে জ্বালা-যন্ত্রণার উপশম হবে, বিষও থাকবে না।
26. থেতলে যাওয়া ও আঘাত লাগা
এ অবস্থায় যজ্ঞডুমুরের ঘনসারের সাথে দুই গুণ পানি মিশিয়ে পেস্ট বা লেইয়ের মতো লাগালে ফুলা ও ব্যথা দুই-ই কমে যাবে।
27. ফোঁড়া রোগে ডুমুর
ফোঁড়ায় যজ্ঞডুমুরের ঘনসার চার গুণ পানির সাথে মিশিয়ে ন্যাকড়া বা তুলোয় লাগিয়ে বসিয়ে দিলে ওটা ফেটে পুঁজ রক্ত বেরিয়ে যাবে এবং ক’দিনেই তা সেরে যাবে।
28. নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, দাঁতের ব্যথা ও মুখের ঘা
এই অবস্থায় যজ্ঞ ডুমুরের ঘনসার আট গুণ পরিমাণ পানিতে গরগরা করলে বা মুখে রাখলে দু-একদিনের মধ্যে রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
29. গ্রন্থির ফোলা রোগে ডুমুর
যজ্ঞ ডুমুরের ক্ষীর ফোলাতে লাগালে প্রদাহ ও ব্যথা কমে যায়।
30. রক্তপিত্ত, রক্তার্শ ও রক্তস্রাব
যজ্ঞডুমুরের ঘনসার ১২ গ্রেন আন্দাজ নিয়ে ৫০ মিলিলিটার পানিতে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার খেলে রোগের উপশম হয়।
31. পিত্তবিকারজনিত রোগে ডুমুর
এ ক্ষেত্রে যজ্ঞডুমুরের শুকনো পাতার গুঁড়ো মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে পিত্তবিকারজনিত রোগ সেরে যায়।
32. চিকেন পক্স রোগে ডুমুর
এসব ক্ষেত্রে ডুমুরের পাতা দুধে ভিজিয়ে মধুতে মেড়ে লাগালে বিশেষ উপকার হয়।
33. প্রদর রোগে ডুমুর
যজ্ঞডুমুরের সাথে রক্ত মধুর মিশিয়ে খেলে প্রদর রোগ সেরে যায়।
34. বহুমূত্র রোগে ডুমুর
দাদখানি চালের সাথে যজ্ঞডুমুরের ভর্তা খেলে বহুমূত্র রোগে উপকার হয়।
35. অর্শ বা পাইলস রোগে ডুমুর
হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ডুমুর খাও, এতে অর্শ ও বাত দূর হয়।’
36. বাতব্যথা রোগে ডুমুর
হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর কাছে এক প্লেট ডুমুর নিয়ে এলো। তখন রসুল (সা.) বললেন, ‘ডুমুর খাও, এটা সেসব ফলের মধ্যে একটি যা বেহেশত থেকে আমাদের জন্য পাঠানো হয়েছে। এটা অর্শ ও বাতব্যথা দূর করে। ’ বুখারি।
37. ডায়াবেটিস রোগে ডুমুর
১০-১২ গ্রাম শুকনো ডুমুরপাতা পানিতে ভিজেয়ে বা চা হিসেবে দিনে দু-তিন বার সেবন করলে ডায়াবেটিস রোগে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া ডুমুর ফল সিদ্ধ করে পেঁপের সঙ্গে ভর্তা করে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়।
38. শারীরিক দুর্বলতা ও অপুষ্টিজনিত রোগে ডুমুর
১০ গ্রাম শুকনো পাকা ফল ১ কাপ পানিতে ভিজিয়ে জ্বাল দিয়ে আধা কাপ হলে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে সমপরিমাণ গাভীর দুধসহ দিনে দুবার সেব্য। নিয়মিত ২০-২৫ দিন সেবন করে যেতে হবে।
39. ফোঁড়া পাকাতে ডুমুর
ফোঁড়া পাকাতে দুধের সঙ্গে ডুমুর সিদ্ধ করে প্রলেপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
40. পরিপাকশক্তি বৃদ্ধির জন্য ডুমুর
৫-১০ গ্রাম শুষ্ক ছাল থেঁতো করে চার কাপ পানিতে জ্বাল করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ওই নির্যাসের সঙ্গে সমপরিমাণ পুদিনা কিংবা জৈন মিশিয়ে দিনে দুবার নিয়মিত এক মাস সেবন করতে হবে।
ডুমুরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- ডুমুরের আঠা বা কসে কারো কারো এলাৰ্জি হতে পারে।
- পরিমানে বেশি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।
- কিছু কিছু ওষুধের সাথে ডুমুর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- যে কোনো অস্ত্রোপচারের আগে ডুমুর না খাওয়া উত্তম, কারণ ডুমুর অনেক সময় রক্ত পাতলা করে থাকে।
ডুমুরের উপকারিতা সম্পর্কে শেষ কথা
আসলে ডুমুরের ফলের উপকারিতার কথা লিখে শেষ করা যাবে না। ডুমুরের প্রতিটি প্রাকৃতিক উপাদান মানবদেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও আমি বলব আপনার যেকোনো অসুখের চিকিৎসার জন্য প্রথমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Comments
Post a Comment