techowe.com https://www.techowe.com/2022/08/blog-post_15.html

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস পালিত হয়। দিনটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত।

এই দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য আনুষ্ঠানিকভাবে উদিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহাকুমার ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথতলার সাদামাটা পরিবেশে একটি আমবাগানে শপথ নিয়েছিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার।১৭৫৭ সালের ২২ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাঙালির যে স্বাধীনতার সূর্য পশ্চিম গগনে অস্তমিত হয়েছিল, তার থেকে কিছু দূরে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে সেই স্বাধীনতার সূর্য আবার পূর্ব গগনে উদিত হয়েছিল। 

১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশী আম্রকাননে বাংলার যে স্বাধীনতা অস্তমিত হয়েছিল,  তার ঠিক ২১৪ বছর পর , ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের মুজিবনগরের আরেক আম্রকাননে বাংলার হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা আবারো উদিত হয় এবং বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটিকে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে দিলনিলো।

চুয়াডাঙ্গায় বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও তা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেনে যাওয়ায় ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ হয়। এ বিপ্লবী সরকার মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে। এর আগে  ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার নামে বাংলাদেশের প্রথম প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল, মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা (বর্তমানে মুজিবনগর উপজেলা) গ্রামে এক আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। শেখ মুজিবুর রহমান এই সরকারের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। কিন্তু তিনি পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এই সরকার গঠনের পর থেকে দেশের স্বাধীনতার জন্য অগণিত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাধীনতা  সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় গণহত্যা। ২৫ মার্চ রাতে হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২ নং বাসা থেকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার পর বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেজর জিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে নিরস্ত্র বাঙালি যার যা কিছু ছিল তাই নিয়েই হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মুজিবনগর সরকার গঠন করা তৎকালীন সময়ে অপরিহার্য ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সেনাবাহিনী ফ্রান্স দখল করে নিলে জেনারেল দ্য গলে লন্ডনে যেভাবে ফ্রান্সের প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন, অনেকটা সেভাবেই বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার উত্তরসূরিরা ১০ এপ্রিল  কলকাতায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন।প্রবাসী সরকার ১৪ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গাকে রাজধানী করে সেখানে সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সনদ ঘোষণার ও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের গোপন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বিশ্ববাসীকে দেখাতে চেয়েছিল বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ হচ্ছে ভারতের মাটিতে বসে। ইয়াহিয়ার এ প্রচার মিথ্যা প্রমাণ করতেই বাংলাদেশের মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যে কোনো ভাবেই হোক খবরটি পৌঁছে যায় পাকিস্তানি হানাদারদের কাছে। এ জন্য ১৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় বিমান থেকে বৃষ্টির মতো বোমাবর্ষণ করে ওরা। ফলে শপথ অনুষ্ঠান পিছিয়ে যায়। এবার খুবই সতর্কতার সঙ্গে শপথ অনুষ্ঠানের তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করেন তাজউদ্দীন আহমদসহ বিশ্বস্ত কয়েকজন।

পাকবাহিনীর বিমান হামলার কথা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের মানচিত্র দেখে সর্বোত্তম নিরাপদ একটি স্থান হিসেবে মেহেরপুরকে শপথ অনুষ্ঠানের স্থান হিসেবে তারা নির্ধারণ করেছিলেন। ভৌগোলিক সুবিধার জন্য সেখান থেকে স্বল্প সময়ে ভারতে প্রবেশ করা যাবে এবং ভারত থেকে শত্রুদের ওপর আঘাত হানাও সহজতর হবে, এ চিন্তাই এক্ষেত্রে কাজ করেছে।

১৭ এপ্রিল আকাশ ছিল মেঘলা। মাঝে-মধ্যে মেঘের গুড় গুড় গর্জন শোনা গেল। যদিও সেটা মেঘের গর্জন ছিল।সকাল ১০টার মধ্যে বৈদ্যনাথতলার আম্রকানন লোকে-লোকারণ্য হয়ে উঠল। তবে তাদের মধ্যে তরুণ ও যুবকদের সংখ্যাই ছিল বেশি। বেলা ১১টার মধ্যে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে প্রবাসী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র ও ত্রাণমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি প্রমুখ এলেন।

সকাল ৯টা থেকেই সেখানে নেতৃবৃন্দ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের আগমন শুরু হয়ে গিয়েছিল। দেশি-বিদেশি প্রায় জনা পঞ্চাশেক সাংবাদিক ওই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। আম্রকানন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা শেষ মুহূর্তে খবর পেয়ে যে যেখানে ছিলেন পঙ্গপালের মতো যেন উড়ে আসতে থাকেন। আনন্দ-আবেগে উদ্বেলিত শত শত কণ্ঠের ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, গগনবিদারী স্লোগানে স্লোগানে আম্রকাননের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়েছিল সেদিন। চৌকি পেতে তৈরি করা হয়েছিল শপথ মঞ্চ। মঞ্চের ওপর সাজানো ছয়টি চেয়ার। আশপাশের বাড়ি থেকে চৌকি, চেয়ার ও বাঁশ আনা হয়েছিল সেদিন।  উপরে শামিয়ানাও লাগানো সম্ভব হয়নি। ফলে খোলা আকাশেই মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল।বেলা ১১টায় শুরু হয়েছিল শপথ অনুষ্ঠান।

মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আশপাশ ঘিরে কয়েক মাইলব্যাপী ভারতের কয়েকশ অ্যান্টি এয়ার ক্রাফ্ট, অসংখ্য ট্যাংক এবং দম দম এয়ারপোর্টে ভারতের কয়েক ডজন মিগ ফাইটিং এয়ার ক্রাফ্ট প্রস্তুত ছিল। তবে সেদিকে সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারদের যাওয়ার বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।

১৭ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়।এতে উল্লেখ করা হয়, ‘শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদেও অধিষ্ঠিত থাকবেন। রাষ্ট্রপ্রধানই সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অধিকারী।’ তবে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নাজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাজউদ্দিন আহমেদকে সরকারের প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীকে অর্থমন্ত্রী, এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্র এবং খন্দকার মোশতাক আহমেদকে পররাষ্ট্র  মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া এই সরকারই সিদ্ধান্ত নেয় যে, কর্ণেল মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। মুজিবনগর সরকারের তথ্য, সম্প্রচার ও বেতার অধিদফতরের পরিচালক (পরবর্তীতে চরমপত্র খ্যাত) এম আর আখতার মুকুল।

ঘোষণাপত্রের লেখা ছিল, ‘বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সেই ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আমাদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠন করে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য মানবিক মর্যাদা, সাম্য, ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য।’

শপথ হয় আমন্ত্রিত অতিথি, দেশ-বিদেশের সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার, আর মেহেরপুরের স্থানীয় লোকদের সামনে ।শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হলো পবিত্র কোরআন শরিফ তেলাওয়াতের মাধ্যমে। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের পর বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। নবগঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ।সঙ্গে ছিলেন আনসার বাহিনীর ১২ সদস্য। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন টাঙ্গাইল থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য আবদুল মান্নান আর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ইউসুফ আলী।

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া ছিল মেজর ওসমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দলকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি ও তার বাহিনী অনুষ্ঠানস্থলে সময়মতো পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী হুকুম দিলেন সেখানে উপস্থিত এসপি মাহবুবের নেতৃত্বে নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীদের আনুষ্ঠানিক অভিবাদন জানাতে। বীর মুক্তিযোদ্ধা এসপি মাহাবুব তত্ক্ষণাৎ সেখানে যেসব আনসার ছিল তাদের নিয়ে তিনি সামরিক কায়দায় বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে মঞ্চে দণ্ডায়মান স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সামরিক অভিবাদন জানান। মঞ্চে দণ্ডায়মান ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, তার পাশে দণ্ডায়মান প্রধানমন্ত্রী এবং তার পেছনে দণ্ডায়মান প্রধান সেনাপতি  ‘জয় বাংলা’ ধ্বনির মধ্যে সেই অভিবাদন গ্রহণ করেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বলে ঘোষণা করলেন। মঞ্চে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব  এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং অর্থমন্ত্রী মনসুর আলী শপথ গ্রহণ করলেন।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম. এ. জি ওসমানী (পরবর্তীতে জেনারেল) বক্তব্য রাখেন। তারা বিশ্বের স্বাধীন দেশগুলোর সমর্থ চেয়েছেন। সেই শপথ অনুষ্ঠানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এই শপথ অনুষ্ঠানটি বাঙালিদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন জুগিয়েছিল। শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াইয়ে উজ্জীবিত হয়েছিল আমাদের বীর সৈনিকরা।

১৭ এপ্রিল দুপুর থেকে আকাশবাণী, বিবিসিসহ বিশ্বের গণমাধ্যমসমূহে প্রচারিত হলো মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের বিষয়।

মুজিবনগর সরকার আত্মপ্রকাশের পরপরই হানাদার বাহিনী মেহেরপুর মহকুমা এলাকা দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকবার তারা ইপিআর ক্যাম্প দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অতিরিক্ত ঝুঁকির কারণে মুজিবনগর প্রশাসন সুবিধামতো মুক্তাঞ্চলে চলে যায়। পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতের কলকাতা থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে মুজিবনগর সরকার।

এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে একটি সাংবিধানিক সরকার বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করে। মুজিবনগর সরকারের হাত ধরেই এগিয়ে চলে মুক্তিযুদ্ধে।এ সরকারের প্রতি বিশ্ববাসী সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন।

স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান আইনি দলিল যা আমাদের সংবিধান ও সরকারের মৌলিক ভিত্তি।

অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।

মুজিবনগর সরকার সীমিত সামর্থ্য নিয়ে যে দক্ষতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিল, তা যে কোনো স্বাধীনতাকামী জাতির ক্ষেত্রে অবশ্যই অনুসরণীয়। এই সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে  তীব্র প্রতিকূলতার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব, এক কোটির ওপর শরণার্থীর জন্য ত্রাণ ব্যবস্থা,  লাখ লাখ  ছাত্র-জনতাকে প্রশিক্ষণ দেয়া, স্বাধীন বাংলা বেতারের মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, গেরিলা বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানিদের মাঝে ত্রাস সৃষ্টি করা এবং বিশ্বজনমত গঠনসহ বিভিন্ন অবিস্মরণীয় কীর্তি সম্পন্ন করে, যা সমকালীন বিশ্বে অতুলনীয়।



অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

নটিফিকেশন ও নোটিশ এরিয়া