মার্কেটিং কিভাবে করতে হয় -আজ আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনাদের ভালোভাবে জানানোর চেষ্টা করবো। কিন্তু তার আগে আপনাদের মার্কেটিং কাকে বলে সে সম্পর্কে জানানো দরকার বলে আমি মনে করি। এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের মার্কেটিং কি, কত ধরনের মার্কেটিং হতে পারে তার সব কিছু নিয়ে একটা সাধারণ ধারণা দেয়ার প্রয়াস পেয়েছি।
মার্কেটিং এর সংজ্ঞা
মার্কেটিং হল বাজার গবেষণা এবং বিজ্ঞাপন সহ পণ্য বা পরিষেবার প্রচার ও বিক্রয়ের কাজ বা ব্যবসা। মার্কেটিং বা বিপণন আজ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে যা প্রতিটি কোম্পানি এবং সংস্থা তাদের উন্নয়ন কৌশলপত্রে প্রয়োগ করে থাকে। অনেক কোম্পানি তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিপণন কৌশল ব্যবহার করে কারণ তারা নিজেদের প্রচার করতে এবং তাদের পণ্য বা পরিষেবার বিক্রয় বাড়াতে কাজ করে। আজকাল ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির মধ্যে একটি হলো মার্কেটিং।
লোকেরা প্রায়শই মার্কেটিং কী তা জানে না এবং যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে মার্কেটিং কী, তারা প্রায়শই উত্তর দেয় যে তারা এটিকে বিক্রয় বা বিজ্ঞাপন হিসাবে মনে করে। যদিও এই উত্তরগুলি ভুল নয়, কিন্তু তারা শুধুমাত্র বিপণনের অংশমাত্র। মার্কেটিংয়ের আরও অনেক দিক রয়েছে যেমন পণ্য বিতরণ, প্রচার, ডিজাইনিং এবং সামগ্রী তৈরি করা যেমন ল্যান্ডিং পেজ এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিষয়বস্তু, গ্রাহকের অভিজ্ঞতা উন্নত করা, বাজার গবেষণা পরিচালনা করা, বাজার বিভাগ স্থাপন করা ইত্যাদি।
আসলে মার্কেটিং একটি বিস্তৃত ধাৰণা এবং এতে এমন সব কৌশল অন্তর্ভুক্ত থাকে যা একটি কোম্পানি, ব্র্যান্ড বা ব্যক্তিকে তার উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করে।
মার্কেটিং এর জনক কে?
বর্তমানে অনেকেই মাঝে মাঝে প্রশ্ন করেন মার্কেটিং এর জনক কে? এই প্রশ্নের উত্তর হলো মার্কেটিং এর জনক ফিলিপ কোটলার(Philip Kotler)। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে থাকেন।
মার্কেটিং স্ট্রাটেজি
মার্কেটিং কৌশল হল সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে তাদের পণ্য বা পরিষেবা পৌঁছানোর জন্য একটি ব্যবসার সামগ্রিক গেম প্ল্যান। আজকের প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় একটি নির্ধারিত বাজার নির্বাচন এবং বিশ্লেষণ করা এবং এই নির্ধারিত বাজারকে সন্তুষ্ট করার জন্য একটি বিপণন মিশ্রণ বিকাশ ও বজায় রাখার পরিকল্পনা করাকে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি বা বাজারজাতকরণ কৌশল বলা হয়। একটি সম্পূর্ণ বিপণন কৌশল চারটি উপাদান কভার করে: পণ্য, মূল্য, স্থান এবং প্রচার।
মার্কেটিং প্লান কাকে বলে?
মার্কেটিং প্লান হল একটি বিজ্ঞাপন কৌশলের রূপরেখা যা একটি কোম্পানিকে তার নির্ধারিত বাজারে পৌঁছানোর জন্য গাইডলাইন দিয়ে থাকে। মূলত কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্যকে গ্রাহকদের সামনে উপস্থাপন করতে, কোম্পানির লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে নির্দিষ্ট ধরণের পরিকল্পনা করা হয় তাকে মার্কেটিং প্লান বলা হয়।
একটি মার্কেটিং প্লানের উপাদানগুলির মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- মূল্য নির্ধারণ এবং নতুন বাজার নিয়ে গবেষণা
- নির্দিষ্ট জনসংখ্যা এবং ভৌগোলিক লক্ষ্য করে উপযোগী বার্তা তৈরি করুন
- পণ্য এবং পরিষেবা প্রচারের জন্য প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন
- ব্যবসার মেট্রিক্স ফলো আপ করা যা মার্কেটিং প্রচেষ্টার ফলাফল এবং তাদের রিপোর্টিং টাইমলাইন পরিমাপ করে
মার্কেটিং কিভাবে করতে হয়?
মার্কেটিং করার আগে দেখা প্রয়োজন –
আপনার মার্কেটিং কি কারণে করবেন
আপনার মার্কেটিং করার আগে এটা পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন মার্কেটিং করার আপনার প্রয়োজন কেন। ধরে নিন আপনি চুল পড়া বন্ধ করার তেল বিক্রি করতে চাইছেন। এখন এখানে আপনার উদ্দেশ্য ওই তেলটি বিক্রি করা
কি মার্কেটিং করবেন
আপনার মার্কেটিং করার আগে এটা জানা প্রয়োজন যে কোন জিনিসটা মার্কেটিং করতে চাইছেন।এখন যদি আপনি ওই তেলটি বিক্রি করতে চান তো আপনাকে আগে আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে জানতে হবে ভালো করে, তাতে করে আপনি ওই প্রোডাক্টের ছোট ছোট ব্যাপারগুলি জানতে পারবেন
যাতে করে কাস্টমার আপনাকে জিজ্ঞেস করলে আপনি ওই বিষয়ে সব কিছু জানেন এটা বুঝে যায় এবং আপনাকে ও আপনার প্রোডাক্টকে বিশ্বাস করে।
কোন কৌশলে করবেন
মার্কেটিং শুধু করলেই হয় না তার আগে একটি প্ল্যান তৈরি করার অবশ্যই প্রয়োজন আছে যে আপনার প্রোডাক্টটিকে আপনি কিভাবে বাজারে নিয়ে আসবেন ।
আপনার মার্কেটিং এর টার্গেট কোনটা হবে
এর সাথে সাথে জানা প্রয়োজন আপনার টার্গেট কোন প্রকার মার্কেট হবে । সেটা অবশ্যই হতে হবে আপনার প্রোডাক্ট উপযোগী
যদি একটি চুড়িদার আপনি একটি লোকের কাছে বিক্রি করেন তার কাছে যত বেশি গ্রহণযোগ্য হবে তার থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে একজন মহিলার কাছে যে চুড়িদার পরতে ভালবাসে । সুতরাং এই মার্কেট কারদের কাছে করবেন জানতে হবে।
মার্কেটিংয়ের মুল স্তম্ভ
১. টার্গেট করা অডিয়েন্স
আমি আপনাকে এই ব্যাপারটি আগেই বুঝিয়েছি। আপনাকে দিশাহীন ভাবে না কাজ করে বা খেটে আপনাকে তাদের জন্য খাটতে হবে যারা আপনার প্রোডাক্ট এর ব্যাপারগুলোয় ইন্টারেস্টেড কারন তারাই আপনার কাস্টমার।
আপনি চকলেট বিক্রি করলে তারাই কিনবে যারা চকলেট খেতে ভালবাসে। এর ফলে আপনাকে যারা পছন্দ করে না তাদের পিছনে সময় ব্যয় কমে যাবে। এবং সেই সময়টাই যদি আপনার টার্গেট করা লোকের পিছনে দেন সেরা কাজ করবে।
কিভাবে পাবেন – আপনাকে এর জন্য আপনি যে জায়গায় কাজ করছেন সেই জায়গার তথ্য জোগাড় করতে হবে বিভিন্ন ভাবে যাতে করে আপনি আপনার সেরা অডিয়েন্স খুঁজে পান।
২. প্রোডাক্ট ডিটেলস
আপনি যে জিনিসটা জানেন না সেটা বিক্রি করলে আপনার লাভ যতটা না হবে তার থেকে বেশি লাভ হবে যদি আপনার বিক্রি করা জিনিসটি নিয়ে জেনে নেন।
এতে করে আপনি কাস্টমারকে বোঝাতে পারবেন তার দুর্বল জায়গাগুলোয় ধরে নিয়ে।
এবং দুর্বল জায়গাগুলো ধরে ফেলে আপনি যদি বোঝাতে পারেন আপনার প্রোডাক্ট কাস্টমারের সমস্যার সমাধান করবে,আপনার জিনিসটি বিক্রি হতে বাধ্য।
৩. ইমপ্লিমেন্ট
আপনার মনে যদি কোনো ভালো ধারনা বা আইডিয়া থাকে তো সেটা বাস্তবে কাজ করানোর কাজটিও আপনাকে করতে হবে যাতে নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারেন।
৪. Invest
আপনাকে আপনার কাজের জন্য অবশ্যই invest করতে হবে। কারন কোনো কাজই বিনা invest হয় না সেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ invest থেকেই থাকে।
৫. Observation
আপনার মার্কেটিং করার সময় সেই পুরো ব্যাপারটির অব্জারভেশন খুবই জরুরী তাতে করে আপনি আপনার কৌশল পাল্টানো বা সেটা কতটা লাভদায়ক জানতে পারবেন।
৬. Quick action
আপনার মার্কেটিংয়ের কৌশলে বা অন্য কোথাও ভুল থাকলে সেটা বুঝে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি তার সমাধান করতে হবে । যেকোনো কাজ খুবই দ্রুততার সাথে করতে হবে।
৭. Funnel
এটি একটি নতুন কনসেপ্ট যেখানে কম সময়ে বুদ্ধি দিয়ে কাস্টমারের কাছে প্রোডাক্ট বিক্রি করা যায়।
৮. Craze
আপনি যদি আপনার প্রোডাক্টটির জন্য মার্কেটে ক্রেজ তৈরি করতে পারেন তো আপনার মার্কেটিং এর ব্যাপারটি অনেক সহজে ও ভালোভাবে হয়ে যাবে।
মার্কেটিং করার উপায়
আপনার নিশ্চয় জানা আছে বা না জানলে জেনে নেওয়া দরকার যে মার্কেট দুই ধরনের অফলাইন মার্কেট ও নেট বা অনলাইন মার্কেট । বর্তমানে মার্কেটিং অনলাইনের দিকেই বেশি ঝুঁকছে তবে অফলাইন মার্কেটেরও ক্ষমতা অনেক বেশি।
অফলাইন মার্কেট বলতে আমাদের বাজারে দোকান শপিংমল, বাড়ি ভিত্তিক মার্কেট আর অনলাইন মার্কেট বলতে ডিজিটাল দোকান বা ব্যাবসাকে বুঝিয়েছি আমি।
ধরুন কেউ একটি কোম্পানির আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু বিক্রি করতে চাইছে। সে যেমন কোম্পানির থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে বিক্রি করে বাড়ি বাড়িতে তার কাছে ঠিক ঠাক মার্কেটিং করলে বেশি প্রোডাক্ট বিক্রি হয় কম খেটে আবার তেমনই একজন দোকান দারেরও খদ্দের পেতে মার্কেটিং করতে হয়।
অফলাইন মার্কেটিং কিভাবে করতে হয়
কোম্পানির representative-দের জন্য মার্কেটিংয়ের উপায় –
আপনি যদি কোনো একটি প্রোডাক্ট নিয়ে সবার কাছে বিক্রি করতে যান তাহলে আপনাকে অনেক খাটতে হবে এবং আপনার আশা অনুযায়ী ফল নাও পেতে পারেন । সবচেয়ে ভালো হয় যদি –
- আপনার প্রোডাক্ট কিনতে পারে এমন লোকদের খুঁজে বের করুন। দরকার হলে তাদের লিস্ট বানিয়ে ফেলুন তথ্য জোগাড় করে
- ওই লিস্ট অনুযায়ী লোকেদের প্রথমেই আপনি ভালো করে তার সমস্যার কোথা জানুন এবং আপনার কাস্টমারকে বুঝুন ।এবং সমাধান করার উপায় হিসাবে আপনার প্রোডাক্টটি অফার করুন।
- যতটা সম্ভব বিশ্বাস অর্জন করতে চেষ্টা করুন যাতে সে আপনার কোথা শুনতে ও আপনার প্রোডাক্টের ব্যাপারে আগ্রহী হয়
সবশেষে,
বলা হয়ে থাকে মার্কেটিং হল ব্যবসার হৃদস্পন্দন। তাই সমস্ত বড় নামকরা কোম্পানিগুলি তাদের ব্র্যান্ডের মান বজায় রাখতে বিজ্ঞাপন প্রচারে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। আপনি যদি এই আপনার মার্কেটিং কার্যক্রম পরিকল্পিত ও সময় উপযোগী করতে ব্যর্থ হন তবে আপনার পুরো ব্যবসাই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। অতএব, আপনি যখন ব্যবসায় নামবেন তখন অবশ্যই একটি দক্ষ মার্কেটিং প্ল্যান নিয়ে নামবেন।
Comments
Post a Comment