প্রতিদিন কম্পিউটার ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা কিছু সাধারণ সমস্যার সম্মুখীন হই। হয়তোবা সমস্যাটি ছোট কিন্তু জানা না থাকার কারনে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যেতে হয়। এ জন্য অনেক সময় ও অর্থ খরচ করতে হয়। কিন্তু সামান্য কিছু ধারণা থাকলে আপনি ঘরে বসে ঠিক করতে পারেন আপনার কম্পিউটারটি। আজকের এই আলোচনায় আমি কম্পিউটারের কিছু সাধারণ সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো।
সমস্যা – ১
প্রায়ই কম্পিউটার অন করার পর দেখা যায় পিসি রানিং কিন্তু কোন ডিসপ্লে নেই। রিস্টার্ট দেয়ার পরেও সেই একই অবস্থা। বেশিরভাগ সময় এই সমস্যা হয় RAM থেকে। RAM এর স্লট থেকে RAMখুলে স্লট এবং RAM পরিস্কার করলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। অনেক সময় মনিটরের গ্রাফিক্স/ভিজিএ কেবল ঠিকভাবে লাগানো না থাকলেও এ সমস্যা হতে পারে। র্যাম পরিস্কার করার পরেও একই সমস্যা থাকলে ধরে নিতে হবে পাওয়ার সাপ্লাই, মাদারবোর্ড কিংবা প্রসেসর থেকে সমস্যা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়াই উত্তম।
সমস্যা – ২
পিসিতে পাওয়ার নেই। এটি ৩টি কারনে হতে পারে –
- পাওয়ার কেবল নষ্ট – মনিটরের পাওয়ার কেবল সিপিউতে লাগিয়ে চেক করতে পারেন কেবলটি ভালো আছে কিনা।
- পাওয়ার সাপ্লাই নষ্ট – পাওয়ার সাপ্লাই চেক করার একটি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে। সেটি হল মাদারবোর্ড থেকে পাওয়ার সাপ্লাই এর ২০ বা ২৪ পিনের কানেক্টরটি খুলে একটি তার দিয়ে শর্ট দিয়ে পাওয়ার চেক করা। ছবির ২৪ পিনের পাওয়ার সকেটে একটি সবুজ তার দেখতে পাচ্ছেন, ঠিক তার উল্টো পাশে কালো একটি তার আছে। আপনি এক টুকরো তার নিয়ে তার এক মাথা সবুজ পিনে এবং আরেক মাতা কালো পিনের ওখানে লাগানোর পরে যদি পাওয়ার সাপ্লাই চলা শুরু করে তাহলে পাওয়ার সাপ্লাই ভালো আছে ধরে নিতে পারেন। (মাঝে মাঝে পাওয়ার আসলেও পাওয়ার সাপ্লাই নষ্ট থাকতে পারে তবে সেটা খুব কমই হয়)
- মাদারবোর্ডের ফ্রন্ট প্যানেল কানেক্টর ঠিকভাবে লাগানো নেই – কেসিং এর সামনের সুইচগুলোর কেবল মাদারবোর্ডে ঠিকভাবে লাগানো আছে কিনা তা চেক করতে পারেন। কোন কেবল মাদারবোর্ডে কোথায় বসবে সে সম্পর্কে আইডিয়া না থাকলে এই পোস্টটি পড়তে পারেন – হাতুড়ে ইঞ্জিনিয়ার কথন – ১ – আপনার ডেস্কটপ পিসির ফ্রন্ট প্যানেল কিভাবে লাগাবেন??
সমস্যা – ৩
পিসি কিছুক্ষন চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। এই সমস্যাটি বেশিরভাগ সময় হয় প্রসেসর কুলারে বালি জমার কারনে। এছাড়া কুলার প্রসেসরের উপর ঠিকভাবে না বসলেও এই সমস্যা হয়। যদি আপনি কুলার খুলে পরিস্কার করে বসাতে চান তাহলে খেয়াল করবেন প্রসেসর এর উপরে সাদা পেস্টের মত একটি পদার্থ আছে, এর নাম কুলিং পেস্ট। যদি আপনার প্রসেসর এর উপরে কুলিং পেস্ট না থাকে তাহলে নিকটস্থ যে কোন ইলেক্ট্রনিক্স এর দোকান থেকে কুলিং পেস্ট কিনে ব্যবহার করুন। ছোট এক কোটা কুলিং পেস্ট এর দাম ৩০/৪০ টাকা।
সমস্যা – ৪
পিসি স্লো, কম্পিউটার ব্যবহার করেন কিন্তু এই সমস্যায় পড়েননি এমন ইউসার নেই। কম্পিউটার স্লো এই সমস্যাটি অনেক কারনে হতে পারে, আমি কয়েকটি কারন উল্লেখ করলাম -
- ভাইরাস এর কারনে – ভাইরাস কি, কম্পিউটারে কি সমস্যা করে এগুলো সম্পর্কে মোটামুটি সবাই জ্ঞাত আছেন, এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন, কম্পিউটারকে ভাইরাস মুক্ত রাখুন। চেস্টা করুন জেনুইন এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে কারন ডেমো কপি মাঝে মাঝে নিজেই ভাইরাস হয়ে যায়।
- wqa রেম সমস্যার কারনে – একটু খেয়াল করতে দেখবেন যে প্রত্যেকটি রেম এ অনেকগুলো মেমোরি চিপ থাকে। ৮ বা ১৬ চিপের রেম এ বেশি দেখা যায়। যে কোন ১/২টি চিপ প্রবলেম থাকলে পিসি স্লো কিংবা হ্যাং করবে প্রায়ই। সেক্ষেত্রে আপনি উইন্ডোস সেটাপ দিবেন কারন রেম এর চিপ জনিত প্রবলেম থাকলে উইন্ডোস সেটাপের ফাইল-কপির পর্যায়ে প্রবলেম করবে।
- হার্ডডিস্ক সমস্যার কারনে – হার্ডডিস্ক সমস্যার কারনেও আপনার পিসি স্লো করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি হার্ডডিস্কটি পার্টিশন করে নতুনভাবে উইন্ডোস সেটাপ দিতে পারেন। এরপরেও না হলে হার্ডডিস্ক পরিবর্তন কিংবা রিপেয়ার এর কথা চিন্তা করতে পারেন। হার্ডডিস্কের কারনে পিসি স্লো হলে পায় সময় হার্ডডিস্ক থেকে ক্যাট-ক্যাট আওয়া শোনা যায়।
- পাওয়ার সাপ্লাই – পাওয়ার সাপ্লাই কোন কারনে হার্ডডিস্কে এবং প্রসেসরে পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়ার না দিতে পারলে পিসি স্লো করবে।
সমস্যা – ৫
ভিডিও কিংবা গেম প্লে করতে সমস্যা – অনেকেই নতুন উইন্ডোস সেটাপ করার পর মাদারবোর্ডের সিডি সম্পূর্ন সেটাপ না করে শুধু সাউন্ড সেটাপ করে থাকেন। সাউন্ড ড্রাইভার ছাড়াও আরো দুটি গুরত্বপূর্ন ড্রাইভার হল আইএনএফ এবং গ্রাফিক্স। আইএনএফ ড্রাইভার সেটাপ না করলে ইউএসবি এবং অন্যান্য ইন্ট্রিগেটেড ডিভাইসগুলো স্লো করবে এবং গ্রাফিক্স ড্রাইভার সেটাপ না করলে আপনি ভিডিও জনিত কোন ফাইল প্লে করতে পারবেন না। ভিডিও ফাইল প্লে হলেও আটকে আটকে আসবে এবং ফুল স্কিনে ঘোলা দেখাবে। মাঝে মাঝে এই ফাইলগুলো চালাতে গেলে পিসি রিস্টার্টও করবে। সুতরাং পিসির ফুল পারফরমেন্স পেতে হলে মাদারবোর্ডের সিডি থেকে সবগুলো ড্রাইভার সেটাপ করা জরুরী।
সমস্যা – ৬
সিডিরম কিংবা ডিভিডি রম এ বুটেবল উইন্ডোস ডিস্ক দেয়ার পরেও উইন্ডোস সেটাপ শুরু হচ্ছে না। এই সমস্যাটি দুটি কারনে হতে পারে
- মাদারবোর্ডের বায়োসে বুট অপশনে বুট ডিভাইস প্রায়োরিটিতে ফাস্ট বুট ডিভাইস হিসেবে অপটিক্যাল ড্রাইভ সিলেক্ট করা নেই। এক্ষেত্রে আপনি বায়োস (Bios) বুট অপশনে যেয়ে ফার্স্ট বুট ডিভাইস (first boot device) এ অপটিক্যাল ডিভাইস বা সিডি-ডিভিডি রম সিলেক্ট করলেই আশা করা যায় সমস্যাটির সমাধান হবে। বায়োসে ডুকার জন্য F2/F12/F10/DEL এই বাটনগুলো ব্যবহার করতে পারেন। সাধারনত ইন্টেল মাদারবোর্ড এ F2 এবং চিপসেট মাদারবোর্ডগুলোতে DEL বাটন প্রেস করে বায়োসে ডুকা যায়।
- আরেকটি কারন হলো বুটেবল ডিস্কটি অধিক স্প্রিডে রাইট করা। বাজারে যেই ডিস্কগুলো পাওয়া যায় সেগুলো লোকাল সিডিতে অনেক স্প্রিডে রাইট করা হয় যার কারনে প্রায়ই অপটিক্যাল ড্রাইভ এ ডিস্কগুলো রিড করতে পারে না।
সমস্যা – ৭
উইন্ডোস সেটাপের ফাইলকপি পর্যায়ে বারবার ফাইল মিস করা এবং ফাইল কপি স্লো – এ সমস্যাটি RAM কিংবা উইন্ডোস ডিস্ক থেকে হয়। যদি সমস্যাটি ডিস্ক থেকে হয় তাহলে ১/২টি ফাইল মিস করবে সেক্ষেত্রে ডিস্কটি পাল্টে আরেকটি দিলেই সমাধান হয়ে যাবে। আর যদি RAM থেকে এ সমস্যাটি হয়ে থাকে তাহলে আপনি কয়েকটি ডিস্ক পাল্টানোর পরেও দেখবেন ফাইল মিস করছে। এক্ষত্রে আপনি RAM পরিবর্তন করলেই হবে।
সমস্যা – ৮
ল্যাপটপে ইদানিং অনেকেই একটা সমস্যা পাচ্ছেন যে, কোন কিছু লিখতে গেলে নির্দিষ্ট কিছু বাটন অটোমেটিক উঠতে থাকে, একটি আইকন সিলেক্ট করতে গেলে অন্যটি সিলেক্ট হয়ে যায়। একটি ফোল্ডার ওপেন করলে অনেকগুলো একসাথে ওপেন হয়ে যায়। এই সমস্যাটি ল্যাপটপের কি-বোর্ড থেকে হয়। কিছু বাটন বালি কিংবা অত্যাধিক জোরে চাপ দেওয়ার কারনে সবসময় প্রেসকৃত অবস্থায় থাকে। এক্ষেত্রে আপনি একটি ব্রাশ দিয়ে পরিস্কার করতে পারেন। ভালোভাবে পরিস্কার করার পরেও না হলে কিবোর্ডটি চেঞ্জ করাই ভালো হবে, আরেকটি পদ্ধতি হলো ল্যাপটপের ভিতর থেকে কি-বোর্ডের কানেকশন খুলে আলাদা ইএসবি কি-বোর্ড ব্যবহার করা।
Comments
Post a Comment